Tuesday, November 29, 2011

পথে পথে প্রতারণা ও কিউবি’র খেলনা মডেম



ঢাকা : দ্রুতগতির ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার এই নামের বাহানায় ‘কিউবি’র প্রতারণা এখন পথে পথে। অলিগলি থেকে শুরু করে রাজধানীর পথে পথে ছড়িয়ে পড়েছে কিউবি’র ভ্রাম্যমাণ বিক্রয় কেন্দ্র। আর তাতে তাদের গ্রাহক বাড়ছে ঠিকই কিন্তু সার্ভিস না বাড়ায় তা হচ্ছে প্রতারিত, মানুষের সংখ্যা বাড়ানোরই নামান্তর।

অনেক বিক্রয় কেন্দ্র থেকে ‘ফ্রি’তে দেয়া হচ্ছে কিউবি’র মডেম বিনিময়ে বিক্রি করছে এক হাজার টাকার রিচার্জ। খেলনা কিনলে ব্যাটরি ফ্রি পাওয়া যায় কিন্তু কিউবি’র ব্যাটারি কিনলে খেলনা ফ্রি দিচ্ছে।

একথা বলছিলেন কিউবি’র প্রতারিত এক গ্রাহক। ঝিগাতলার শফিউল বাংলানিউজকে বলেন, খেলনা বলছি এই কারণে যে কিউবি’র ওই ফ্রি মডেম খেলনার চেয়েও ঠুনকো। তা একমাসও টেকে না।

আর বাচ্চাদের খেলনা অকেজো হয়ে গেলে তা যেমন ফেরত নেয়া হয় না তেমনি কিউবি’র মডেম কাজ না করলেও তা ফেরত নেয় না কিউবি। সারিয়ে দেয়ার সার্ভিসের কোন বালাই নেই।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, এই মডেম নেয়ার পর থেকেই কিউবি’র ফাঁদে পরছেন সাধারণ মানুষ। ভ্রাম্যমাণ বুথ বা ছোট দোকানগুলো থেকে নেয়া মডেমগুলোর সমস্যা হলে পরিবর্তন বা ফেরত দিতে পারছেন না গ্রাহকরা। অথচ কেনার সময় মেডমের ৩-৬ মাসের গ্যারান্টি দেয়া হচ্ছে।

কিউবি’র ওয়েবসাইটেও ১৪ দিনের মধ্যে কোন সমস্যা হলে ‘মানি ব্যাক গ্যারান্টি’র প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে।

পত্রিকার পাতায় চমকপ্রদ ও আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন দিয়ে গ্রাহক করার চেষ্টাও চলছে জোরেসোরে। গ্রাহক সেবার মান শূন্যের কোঠায় আর এভাবে কিউবি’র ডিজিটাল প্রতারণা দিন দিন বেড়েই চলছে।

ফেয়ার ইউজেজ পলিসি
‘ফেয়ার ইউজেজ পলিসি’ নামে একটি ট্যারিফ রয়েছে কিউবি’র। যাতে রয়েছে দ্রুতগতির ও আনলিমিটেড ইন্টারনেট সুবিধা। এই ট্যারিফের মাধ্যমেই প্রতারণার নতুন কৌশল বের করেছে কিউবি।

ব্যবহারকারীদের অভিযোগ, স্পিড পাওয়া যায় না। নেটওয়ার্ক পুরোপুরি থাকলেও স্পিড আশানুরূপ নয়। ফেয়ার ইউজেজের শর্ত পূরণ হওয়ার আগেই কমিয়ে দেয়া হচ্ছে স্পিড।

দুর্ভোগের নাম গ্রাহক সেবা কেন্দ্র
কিউবি ব্যবহারকারীদের আরেক দুর্ভোগের নাম ‘গ্রাহক সেবা কেন্দ্র’। অধিকাংশ সময়ই গ্রাহক সেবা কেন্দ্রের নম্বরে সংযোগ পাওয়া যায় না। দীর্ঘসময় অপেক্ষা করার পর সক্রিয় ভাবেই বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় সংযোগ। আর সংযোগ পেয়ে অভিযোগ শোনার সাতদিন থেকে শুরু করে দুই মাস পর্যন্ত গড়ায় প্রাপ্য সেবা প্রাপ্তি। সেবা পাওয়ার ক’দিন যেতে না যেতেই আবার শুরু হয় আগের সমস্যা। এমনই অভিযোগ ব্যবহারকারীদের।

গ্রাহক সেবার নমুনা
কিছুদিন ধরেই কিউবির মডেম কিনে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারছেন না মিরপুরের আমিনুল ইসলাম। অনেক কষ্টে একদিন তিনি গ্রাহক সেবা কেন্দ্রের নম্বরে সংযোগ পান। অভিযোগ জানাতেই অপর প্রান্ত থেকে তাকে জানানো হয়, ‘আপনার কমপিউটারটি রিস্টার্ট দিন। তাতে কাজ না হলে মডেম রিস্টার্ট করুন। তাতেও যদি কাজ না হয় তাহলে মডেমটি একটু ওপরে তুলে ধরুন, ডানে সরান, বায়ে সরান ইত্যাদি।

অনেক কাস্টমার ব্যবস্থাপক সমস্যার কথা শুনে গ্রাহককে জানান, ‘ব্যায়ম প্রসেস’ চলছে। আমাদের নেটওয়ার্কে কাজ চলছে। আশা করছি আপনি ঘণ্টা খানেকের মধ্যেই পূর্ণ স্পিড পাবেন। কিন্তু সেই ঘণ্টা খানেক আর শেষ হয় না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই ব্যায়ম প্রসেস, নেটওয়ার্কে কাজ চলা, আর স্পিড সম্পর্কে মিথ্যাচারের প্রশিক্ষণ নিয়েই কাস্টমার কেয়ারের কর্মীরা নিয়োগ পান কিউবি’তে।

নেই লিনাক্সে ব্যবহারের সুবিধা
অনেক কমপিউটার ব্যবহারকারীরা উইনডোজের পাশাপাশি ‘লিনাক্স’ নামের নতুন একটি অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করছেন। এখানেও কিউবি’র বিপত্তি। কারণ, এই লিন্যাক্সে ব্যবহার উপযোগী কিউবি এখনো সরবরাহ শুরু করেননি বলে জানান অনেক ব্যবহারকারী।

কিউবি থেকে গ্রাহকদের বলা হচ্ছে, আপনার উইন্ডোজ আসল না হওয়ার কারণে এই সমস্যা হচ্ছে। তবে ব্যবহারকারীদের অনেকেই ল্যাপটপের সঙ্গে আসল ও নিবন্ধনকৃত উইন্ডোজ ব্যবহার করেন।

ফেসবুক ফ্যান পেজ বিড়ম্বনা
কিউবি তাদের ওয়েবসাইটটির পরিবর্তে প্রচারের ক্ষেত্রে সবসময় ফেসবুকের ফ্যান পেজটি ব্যবহার করে। আর কোন গ্রাহক যদি কিউবি’র সেবা মান নিয়ে তার কোন অভিযোগ এই ফ্যান পেজে লিখেন তাহলে তা কিছু সময় পরেই মুছে দেয়া হয়। অনেক সময় ওই ব্যবহারকারীকে পেজ থেকে ব্যান করে দেয়া হয়।

প্রতারণার শেষ কোথায়
প্রতারণার শিকার হয়ে কিউবি থেকে সরে আসছেন হাজার হাজার গ্রাহক। সামাজিক যোগাযোগ সাইটগুলোতে এখন অনেকই খুব কম দামে তাদের মডেম বিক্রয়ের পোস্ট দিচ্ছেন। একই সঙ্গে প্রকাশ করছেন কিউবি’র প্রতারণার চিত্র।

তবে দেশকে ইন্টারনেট ব্যবহারে আধুনিকতার পথে এগিয়ে নিতে এ ধরনের ডিজিটাল প্রতারণা বন্ধ করার কোন বিকল্প নেই।